
কলাপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এস এম মনিরুল ইসলাম (৫০) এবং উপজেলা যুবলীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক অসীম তালুকদারকে (৫২) পৌর শহরে কতিপয় সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলাপাড়া পৌর শহরের গোডাউন ঘাট এলাকায় এ ঘটেছে।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, আহত এ দুই নেতা আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমানের সমর্থক। মাহবুবুর রহমানের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পটুয়াখালী-৪, (কলাপাড়া-মহিপুর-রাঙ্গাবালী) সংসদীয় আসনে বৃহস্পতিবার মনোনয়ন পত্র দাখিল করার ঘোষনায় হঠাৎ করে কলাপাড়ার রাজনীতিতে সহিংস এ ঘটনার জন্য মাহবুবুর রহমান বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মহিববুর রহমানকে দায়ী করেছেন।
মনোনয়নপত্র দাখিল উপলক্ষে পূর্ব নির্ধারিত মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানে আসার পথে বিভিন্ন স্থানে এমপি মহিববুর রহমানের সন্ত্রাসী কর্মীরা বাঁধা দিয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের হামলায় আরও ১৫ জন নেতা-কর্মী বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছে বলে জানায় মাহবুবুর রহমানের সমর্থকরা।
আহত অসীম তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, আমি ও সহকর্মী মনিরুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহাবুবুর রহমানের মনোনয়নপত্র দাখিল উপলক্ষে পূর্ব নির্ধারিত মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। বালিয়াতলী স্টেশন থেকে মোটরসাইকেলে করে এসে শহরের গোডাউন ঘাট এলাকায় নামলে ছাত্রলীগ কর্মী নামধারী ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী রামদা, লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা দৌড়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে পড়ে যাই। এসময় সন্ত্রাসীরা হাতে থাকা রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। সন্ত্রাসী হামলায় আমরা দুজনই মারাত্মকভাবে আহত হয়েছি। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা চলে গেলে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, অসীম তালুকদারের ডান ও বাম পা একাধিক কোপে জখম হয়েছে। এছাড়া বেধড়ক মারধরে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে।
অপরদিকে এস এম মনিরুল ইসলামের পিঠ, দুই হাত ও পায়ে রামদার কোপ লেগেছে। তাঁর শরীরেও বেধড়ক মারধরে জখম হয়েছে।
আহত এ দুইজনকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্ণিং কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মেদ।
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিগত পাঁচ বছর এমপি মহিববুর রহমান শান্তিপূর্ণ কলাপাড়াকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও সহিংস জনপদে পরিনত করেছে। নির্বাচনের আগ মুহুর্তে এ ঘটনা তারই প্রতিফলন। এ ঘটনার জন্য এমপি মহিববুর রহমানের সন্ত্রাসী কর্মীরাই দায়ী।
তিনি আরো বলেন, আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করবো এমন ঘোষণা দেয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মহিববুর রহমান ও তাঁর কর্মীরা মেনে নিতে পারছেনা। যে কারণে নির্বাচনের শুরুতেই তাঁরা সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। আমি এ ঘটনার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃংখলার দায়িত্বে যাঁরা নিয়োজিত রয়েছেন, তাঁদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মহিববুর রহমান এ প্রসঙ্গে জানান, আওয়ামীলীগ আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, আমি আওয়ামীলীগের কাজ করি। আর কেউ কী দাঁড়াইলো, না দাঁড়াইলো তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। এ নিয়ে আমার কোনো বিরোধিতাও নাই। আমার সমস্ত কর্মীদেরকেও নির্দেশ দেয়া আছে, কেউ কারো কোথাও বাঁধা সৃষ্টি করবেনা। এ নিয়ে আমরা কোনো দায়-দায়িত্বও নিবোনা। এ ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। এ ঘটনা মাহবুবুর রহমানের অভ্যন্তরীণ ঘটনারই অংশ, যা আমাদের ওপরই চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মেদ বলেন, আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আহতদেরকেও দেখে এসেছি। তবে এতটুকু বলতে পারি, যাঁরাই এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকুক না কেন অবশ্যই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন