পটুয়াখালীর সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় আগামী রোববার (২৬ নভেম্বর) থেকে দুইদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুইশত বছররের ঐতিহ্যবাহী রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান এবং মেলা ৷ বর্তমান দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ রাস পূজা উৎসব উদযাপনে পুণ্যার্থী, পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। বিগত দিনে এ রাস উৎসবে লক্ষাধিক মানুষের আগমন ঘটলেও এবার সেই প্রত্যাশা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে দুইদিন ব্যাপী রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে কুয়াকাটা শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও সৈকত। সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও পর্যটকসহ স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে আনন্দের আমেজ। এ উপলক্ষে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের জন্য আবাসিক হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট গুলোতে দেয়া হচ্ছে ৪০-৫০ শতাংশ ছাড়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস পূর্ণিমা ও মেলাকে কেন্দ্র করে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে প্রতি বছরের ন্যায়ে এবারো একদিন পূর্বেই বসানো হচ্ছে নানা পন্য সামগ্রীর স্টল। এই মেলায় অংশগ্রহণ করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাসমান দোকানিরা মেলার সামগ্রী নিয়ে আড়াইশ স্টল বসিয়েছেন। আরো শতাধিক স্টল বরাদ্ধ হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। অনেকে দোকানিরাই ইতোমধ্যে মেলায় দোকান বসিয়ে বেচা-বিক্রি শুরু করছেন। বিগত বছরে এই রাস মেলায় বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে ঝাকজমক থাকলেও মাঝে দুই বছর করোনায় স্বল্প পরিসরে আয়োজন করা হয়। এবার দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় আয়োজকদের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। তবে আয়োজকদের কমতি নেই ভক্তদের বরণ করতে। কিন্তু শঙ্কা কাজ করছে হরতাল আর অবরোধের কারণে উপস্থিতি নিয়ে।
এদিকে রাস পূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের বাড়তি উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কুয়াকাটা শ্রীশ্রী রাধা-কৃষ্ণ মন্দির কতৃপক্ষ জানান, সমুদ্র সৈকতের তীরে মন্দিরের আঙ্গিনায় উৎসবের দিনগুলোতে হাজারো পুণ্যার্থী অবস্থান করেন। স্বল্প পরিসরে তাদের থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা মন্দির কর্তৃপক্ষ করে থাকেন।
মন্দিরের পুরোহিত অনন্ত মুখার্জী বলেন, রাস পূজার উপকরণ সামগ্রী ও বাদ্যযন্ত্র সহকারে কুলবধূদের কুঞ্জ পরিভ্রমণ, শ্রী শ্রী গোপাল ও যোহমায়ার মূর্তি নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ ও জগন্নাথ মন্দিরে গমন, প্রতিদিনের ভোগরাগ ও পূজার্চনা, ভক্তবৃন্দের আগমন, কুঞ্জ প্রদক্ষিণ, যুগল দর্শন, সন্ধ্যারতি কীর্তন ও মহোৎসবের সকল প্রাক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি সুন্দরভাবে আমাদের ধর্মীয় উৎসব জাঁকজমকপূর্ণভাবে সফল হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর পূর্ণিমা তিথিতে শ্রী কৃষ্ণের স্মরণে রাস লীলার আয়োজন করেন সনাতন ধর্মালম্বরীরা। তবে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা এ মেলা এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। রাস পূজায় মন্দির প্রাঙ্গনে আগামী রবিবার থেকে দুইদিন ব্যাপী সারারাত পদবলী কীর্তন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সোমবার প্রত্যুষে পূণ্যার্থীদের সমুদ্রস্নানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে পুণ্যস্নান।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে এটি বৃহৎ উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে বিশাল একটি মেলা বসে। শত শত দোকানীরা তাদের পণ্যের পশরা নিয়ে এখানে ছুটে আসেন। কুয়াকাটা পৌর সভার পক্ষ থেকে স্যানিটেশন সুবিধা, খাবার পানির ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠিত, স্নানের পর চেঞ্জিং সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনিচার্জ হাচনাইন পারভেজ জানান, দুইদিন ব্যাপী এ রাস মেলায় আগত পূণ্যার্থী এবং পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও রাখা হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন সরেজমিনে সৈকত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। আগত ভক্তরা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন সে জন্য রাস পূজা ও মেলা শুরুর পূর্বেই অসঙ্গতিপূর্ণ কাজগুলো তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়েছে। শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে, তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করতে যা যা করা দরকার তা সব করা হবে।