পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির পরও গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বুধবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী, জরুন ও বিকেলে নাওজোড়, কোনাবাড়ি এলাকায় পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এসময় পুলিশ বিক্ষ্ব্ধু শ্রমিকদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় অন্তত ১০ শ্রমিক আহত এবং এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহতদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্থানীয় ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে।

নিহত ওই নারী শ্রমিকের নাম মোসা: আঞ্জুয়ারা খাতুন। তিনি কোনাবাড়ি জরুন এলাকার ইসলাম গার্মেন্টস ইউনিট -২ এর সেলাই মেশিন অপারেটর পদে চাকুরি করতেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার চরগিরিশ এলাকায়। নিহতের স্বামী জামাল হোসেন ও ভাই মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ, শ্রমিক ও এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে আসছিল। এরপর মঙ্গলবার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না শ্রমিকরা। ফলে বুধবার সকাল থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী, জরুন ও বাইমাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুরের চেষ্টা করে। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পরিস্থিতি পুরোই স্বাভাবিক ছিল। দুপুরের পর কোনাবাড়ি এলাকায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় শ্রমিকরা। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকায়ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় শ্রমিকরা। এসময় সংঘর্ষে পুলিশের পাঁচ সদস্য গুরুতর আহত হয়। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পরে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র‌্যাব এর সমন্বয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শ্রমিকরা পিছু হটে যায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এক পর্যায়ে ভাওয়াল বদলে আলম সরকারি কলেজের সামনের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করছে তারা।

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম জানান, আহতবস্থায় পাঁচজন পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত পুলিশ সদস্য প্রবীর (৩০), ফুয়াদ (২৮) ও খোরশেদ (৩০) কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আশিকুল (২৭) ও বিপুল (২৪) তে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ফুয়াদের অবস্থায় বেশি গুরুতর, তার ডান হাতে আঙ্গুলে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এপিসি কারের ভেতর যেসকল পুলিশ সদস্যরা ছিল তাদের অসাবধানতায় এপিসি কারের ভেতর বিস্ফোরক দ্রব্যের বিস্ফোরণে পুলিশ সদস্যরা আহত হয়।

তবে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: মাহবুব আলম বলেন, বুধবার শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে মোট আট জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এর মধ্যে সকালে সংঘর্ষের ঘটনায় তিন ও বিকেলে নাওজোড় এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা পাঁচজন হয়েছে। বিকেলে যে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে এদের শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষ ও এপিসি কারে বিস্ফোরণেও আহত হওয়া ঘটনা আছে। এখন শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে যাচ্ছে, পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে।