
পুরো সপ্তাহজুরে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকরা বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতেছে। এছাড়াও কুয়াকাটার আকর্ষনীয় ৬টি দর্শনীয় স্পটে রয়েছে হাজারো পর্যটকের আনাগোনা।
দেশের সর্ব দক্ষিনের সমুদ্র সৈকত সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র। সূর্যোদয় সূর্যাস্তের বেলাভূমি মনোরম দৃশ্য অবলোকনের তীর্থ স্থান এটি। তাই এখানে দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটক সমাগমের কেন্দ্রস্থল এখন। এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে বর্তমানে পদ্মা সেতু্র সুফল ভোগ করায় পর্যটকদের সমাগম বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুন। একারনে পর্যটক মৌসুম ছাড়াও ধর্মীয় উৎসব সহ সারা বছরই কমবেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের সমাগম থাকে। এবারের ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন থেকে পর্যটকদের আগমন যথাক্রমে ২ লাখের বেশি ছাড়িয়েছে বলে জানা যায়। তবে ঈদের ছুটির সাথে সাথে সাপ্তাহিক ছুটিতে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হবে বলে জানান কুয়াকাটা পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তাদানে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এবং পর্যটন কেন্দ্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সর্বদা নিয়োজিত রয়েছে পর্যটকদের সেবার মান নিশ্চিতের লক্ষ্যে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সমুদ্রের ঢেউয়ের তালে নেচে-গেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে নানা বয়সের আগত লাখো পর্যটক। রোদ ও মেঘের প্রকৃতির মধ্যেও সমুদ্রের পানিতে গা ভাসিয়ে ভ্যাপসা গরমে একটু প্রশান্তির পরশ নিচ্ছে আগত পর্যটকরা।
সমুদ্র দর্শনের পাশাপাশি রাখাইন পল্লী, রাখাইন মার্কেট, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ মন্দির, ঝাউবাগান, গঙ্গামতির লেক, লাল কাঁকড়ার চর, লেম্বুর বন, আন্ধার মানিক নদীর মোহনা, ফাতরার বনসহ দর্শনীয় স্পটগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণে আসা এসকল পর্যটকরা। অনেকে সমুদ্রে ওয়াটার বাইক রাইডিং, স্পিডবোটে উত্তাল সমুদ্রে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
আবার কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে এবং প্রিয়জনের সঙ্গে ছবি তুলে আনন্দ করছেন। দুপুর এবং বিকালেও সমুদ্রে নেমেছেন কেউ কেউ। অনেকে সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করেছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কেউ ফটোগ্রাফার দ্বারা আবার কেউ মুঠোফোনে ফ্রেম বন্দী হচ্ছেন।
এসকল পর্যটক আগমনে ঝিনুক-আচার ব্যাবসী, খাবার হোটেল, শুটকি ব্যবসায়ী, ফটোগ্রাফার সহ পর্যটন নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেচাকেনার ঘুম পড়ে গেছে।
ট্যুরিজম ব্যবসায়ী জহির রায়হান বলেন, গত মার্চে পর্যটক ভড়া মৌসুম শেষ না হতেই রমাজানের আগমন হওয়ায় আমাদের ব্যবসায় ভাটা লেগেছিলো পুরো একমাস। তবে এই ঈদের মৌসুমকে কেন্দ্র করে একমাসের বেকার সময় লাঘব করে কিছুটা লোকসান কেটে ওঠা যাবে। তবে এভাবে যদি পর্যটকদের আগমন অব্যাহত থাকে তবে আমাদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটবে।
আগত পর্যটক, দর্শনার্থীসহ স্থানীয়দের পর্যটক মৌসুমসহ সপ্তাহের বিশেষ দিনগুলোতে কুয়াকাটা থেকে মৎস্যবন্দর আলীপুর পর্যন্ত দীর্ঘ চার কিলোমিটার মহাসড়কে যানজটের যে প্রকট অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পরতে হতো তা থেকে এবারের ভিন্ন চিত্র সরেজমিনে দেখা গেছে। তবে অনেকেই ক্ষমতার দাপটে মানছে না সৃঙ্খলা রক্ষায় পৌরসভার দেয়া নির্দেশনা।
তবে ভবিষ্যতে এমন ভোগান্তি নিরসনের লক্ষ্যে কুয়াকাটা পৌরসভার উদ্যেগে তুলাতলী এলাকায় নির্মাণাধীন বাসটার্মিনাল অবোকাঠামো নির্মান কাজ অতিদ্রত সম্পন্ন হবে বলে জানান পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার।
মেয়র আরো বলেন, আমরা কুয়াকাটা পৌরবাসী সার্বক্ষণিক পর্যটকের সেবায় নিয়োজিত আছি, আমি চাই আরো পর্যটক এখানে আসুক। এই এলাকার সকল পর্যটন ব্যবসায়ীর মুখে হাসি ফুটুক। এবং দেশের পর্যটন শিল্পে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক। তবে বিশেষ করে পদ্মা সেতুর দ্বার আমাদের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য খুলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে কুয়াকাটা হবে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী যা ইতোমধ্যেই সরকারের মাস্টার প্লান কার্যক্রম চলমানাধীন রয়েছে এবং বাস্তবায়ন অতি সন্নিকটে। তাই আমাদের সবাইকে এই পর্যটন শিল্পের খাত প্রসারিত করতে এগিয়ে আসতে হবে, একযোগে কাজ করে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে নান্দনিক সমুদ্র সৈকত হিসেবে দেশের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র উপহার দিতে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমি পর্যটন নগরী ঘিরে উন্নয়নে সকলের একান্ত সহযোগীতা কামনা করছি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, রমজানের পর পর্যটকদের ভীড়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিটি পর্যটক দর্শনীয় স্পটগুলোতে ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করছে।
মন্তব্য করুন